নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের ৮ ই মে অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মধুপুর উপজেলার নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও নির্বাচন পরবর্তী কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা, বাড়ীঘর ভাংচুর, ফসলের ক্ষতিসহ নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পরাজিত প্রার্থী দোয়াত কলম প্রতীকের ছরোয়ার আলম খান আবু।
আজ রবিবার দুপুরে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের অডিটরিয়ামে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন।
লিখিত অভিযোগ তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এ নির্বাচনে সর্বোচ্চ প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে নগ্ন ভাবে ব্যবহার করেছেন। বেশকিছু কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারগণ ব্যাপক জাল ভোট দিতে সহায়তা করেছে। ২৫ থেকে ৩০ টি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগও তার। সেই সাথে নির্দিষ্ট গ্রামের বুথ পরিবর্তন করে অন্য গ্রামের বুথে বসানো হয়েছে৷ জাল ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে এই কাজটি করেছেন প্রিজাইডিং অফিসাররা। বিশেষ করে শোলাকুড়ি ও ফুলবাগচালা ইউনিয়নে সকল কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের জিম্মি করে বারো তির্থের মেলায় আগত বিভিন্ন এলাকার লোক দিয়ে ব্যাপক হারে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে রাতেই ছিল মেরে বাক্স ভরে রাখা হয়েছিল। ভোট গ্রহণ শেষে এজেন্টদের বের দিয়ে অন্য বাস্কগুলো একত্র করে ভোটের বান্ডিল করার সময় প্রায় প্রতিটি বান্ডিলে ২০/৩০ টি করে দোয়াত কলম এবং হোন্ডার ভোট আনারসের বান্ডিলের ভিতরে ঢুকিয়ে ভোট গননা করা হয় এবং ভোট গননা করার আগেই ভোটের ফলাফল শিট তাদের মনগড়া ভাবে লিখে ফেসবুকে প্রকাশ করে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন ফলাফল শিটে আমার এজেন্টদের স্বাক্ষর ছিলনা । অত্যন্ত সুক্ষ কারচুপি এবং ইলেকশন ইনজিনিয়ারিং এর মাধ্যমে জেলা,উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অতি গোপনিয়তার সহিত অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন। ফলাফল শিটে গননা কারী অফিসারের সাথে এজেন্টদের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও অনেক ফলাফল শিটে তাহা দৃশ্যমান নয়। বিকাল ৪ টায় ভোট গ্রহন শেষে গণনা শুরু করে ৪:১৫ মিনিট থেকেই ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়। এতে প্রমান হয় ফলাফলগুলো পূর্বেই তৈরী করা। সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যেই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বিজয়ী দেখানো হলেও ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানের ক্ষেত্রে রাত্রি ১২:৩০ পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। দুই কোটি টাকার ভোট ক্রয়ের অভিযোগও তার৷
এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন প্রতিটি ব্যালটে একটি করে ভোট ৩ পদে ৩ টি ভোট একই সাথে গণনা এবং ঘোষণা করার কথা, কেন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ৫ ঘন্টা আগে এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের ৫ ঘন্টা পরে ঘোষণা করা হলো, পার্শ্ববর্তী উপজেলা ধনবাড়িতে ৬১ টি কেন্দ্র এবং কেন্দ্রগুলো নিকটে পক্ষান্তরে মধুপুরে ৯০ টি কেন্দ্র এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। অথচ আমাদের ফলাফল আগে চলে আসল এটাই সন্দেহের আরেকটি বড় কারণ।
এসব ত্রুটি বিচ্যুতি এবং অনিয়মের অভিযোগে আমি এই অবৈধ ফলাফল প্রত্যাখান করছি এবং নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ইঙ্গিত করে বলেন,আপনারা অবগত আছেন নির্বাচনের পরের দিন সকাল বেলা ১১ দিকে সংসদ সদস্য বাসট্যান্ডে এলাকায় প্রকাশ্য সভায় মাইকে বক্তব্যের সময় বলেন আমার আরেকটা হাত শক্ত হয়েছে। তার মানে ওনি বিজয়ী প্রার্থীর পক্ষে তার সর্বশক্তি দিয়ে কূট কৌশল করেছেন এবং পরাজিত প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে অপশক্তি বলে কটূক্তি করেছেন যাহা রাজনৈতিক এবং গনতান্ত্রিক শিষ্টাচার বহির্ভুত । বিপরীত ভোটারদের বেইমান হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি সংসদ সদস্যের সমালোচনা করে আরও বলেন তার বক্তব্যের পর সমস্ত মধুপুরে আনারসের কর্মীরা আমার কর্মী এবং নিরীহ ভোটার ও জন সাধারনের উপর সন্ত্রাসী উত্তাপ চালাচ্ছে । আকাশীতে মা-ছেলেকে নির্মম ভাবে প্রহার করেছে। মির্জাবাড়ি ইউনিয়নে লেংড়া বাজরে দুই জনের মাথা ফাটিয়েছে। মির্জাবাড়ি বাজার থেকে অফিসের চেয়ার এবং আসবাবপত্র লোট করে নিয়েছে কয়েকটি দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। বাড়ীতে ও ফসলী জমি বিনষ্ট করা হচ্ছে৷ পৌরসভায জুতার দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকার জুতা লুট ও মিস্টির দোকান থেকে ২০/২৫ হাজার টাকার মিষ্টি লুট ও ১৫/২০ হাজার টাকার খাবার খেয়ে বিল না দেয়া অভিযোগও তার।
এ বিষয় প্রশাসনে অবহিত করেও ফল পাচ্ছেন না উল্টো নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়ছে বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন তিনি,।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব ও সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে আরও বলেন, জাতীয় সংসদ সদস্য তাহার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নিরীহ কর্মী এবং ভোটার জনগণকে রক্তাক্ত করেছে। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়া ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনে তার দুর্নীতি অনিয়মের সত্য কথা তুলে ধরার কারণেই তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অত্যাচার করে যাচ্ছেন। তিনি রাজনৈতিক ভাবে আমাকে নিশ্চিহ্ন করতে চান। আর এবার নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য কায়ছার চৌধুরী মুধুপুরে গণসংযোগও ফলেও তার আক্রোশ।
লিখিত বক্তব্যের শেষে তার কর্মী,ভোটার ও জনগণের পাশে দাঁড়ানো ও ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এছাড়াও এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
এসময় মধুপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মাসুদ পারভেজ,টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন,সহ সভাপতি কাজী জাকেরুল মওলা সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply